অক্টোবর মানেই উৎসবের মরসুম। এই সময়টা ভারতের বাজারে কেনাকাটার ধুম পড়ে যায়। নতুন জামাকাপড়, গয়না, ইলেকট্রনিক্স, গাড়ি—সব ক্ষেত্রেই বিক্রি বাড়ে। এই ক্রয়বৃদ্ধির জেরে অক্টোবরে সরকারের কোষাগারে বিপুল পরিমাণ কর জমা পড়েছে। সর্বশেষ সরকারি তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর ২০২৫ মাসে GST Collection দাঁড়িয়েছে প্রায় ₹১.৯৬ লক্ষ কোটি টাকা, যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি।

🔹 উৎসবের মরসুমে জিএসটি রেকর্ড
অর্থনীতিবিদদের মতে, দীপাবলির আগে দাম কমার প্রভাবেই এই বৃদ্ধি। দেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বড় ব্যবসায়ী—সবাই উৎসবের সময় প্রচুর কেনাকাটা করেছেন। এর জেরেই GST সংগ্রহ বেড়েছে। সেপ্টেম্বরে যেখানে GST কালেকশন ছিল ₹১.৮৯ লক্ষ কোটি, অক্টোবরে তা বেড়ে ₹১.৯৬ লক্ষ কোটিতে পৌঁছেছে। অর্থাৎ মাসের ব্যবধানে প্রায় ৪.৬% বৃদ্ধি।
🔹 জিএসটি রেট কমার বড় ভূমিকা
এই প্রবৃদ্ধির পিছনে অন্যতম কারণ হল সরকারের জিএসটি রেট হ্রাসের সিদ্ধান্ত।
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ থেকে রান্নার জিনিস, গাড়ি, মোবাইল, ফ্রিজসহ প্রায় ৩৭৫টি পণ্যের জিএসটি রেট পরিবর্তন করা হয়েছিল। কিছু জিনিসে কর বেড়েছিল, কিন্তু বেশিরভাগ পণ্যের দাম কিছুটা কমেছে। এর ফলেই উৎসবের সময় বাজারে বিক্রির হিড়িক পড়ে যায়।
অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলিতেও বিক্রির রেকর্ড তৈরি হয়। ফ্লিপকার্ট, অ্যামাজন, টাটা নিউ, জিওমার্ট—সব জায়গাতেই বিক্রিবাটা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি ছিল।
🔹 মাসভিত্তিক জিএসটি কালেকশন তুলনা
| মাস | GST কালেকশন (লক্ষ কোটি টাকা) |
|---|---|
| অগাস্ট ২০২৫ | ১.৮৬ |
| সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ১.৮৯ |
| অক্টোবর ২০২৪ | ১.৮৭ |
| অক্টোবর ২০২৫ | ১.৯৬ |
তথ্য: জিএসটি কাউন্সিল
এই টেবিল স্পষ্ট করে দিচ্ছে, ২০২৫ সালের অক্টোবরে কর আদায়ই সর্বাধিক।
🔹 প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় উচ্ছ্বাস
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতাতেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, দীপাবলির আগেই কর হার কিছুটা কমানো হবে। তখনই অনেকেই কেনাকাটার পরিকল্পনা স্থগিত রাখেন। ঠিক যেমন তিনি বলেছিলেন, পুজোর আগে নতুন কর হার কার্যকর হতেই মানুষ বাজারে ঝাঁপিয়ে পড়েন। সেই ফলেই কোষাগারে ঢুকল বিপুল জিএসটি।
অর্থনীতিবিদদের ভাষায়, “দাম কমলে বিক্রি বাড়ে” — অর্থনীতির এই সহজ সূত্র অক্টোবরে পুরোপুরি প্রমাণিত হয়েছে।
🔹 রিফান্ডেও রেকর্ড বৃদ্ধি
শুধু কর আদায় নয়, রিফান্ডেও দেখা গেছে নজিরবিহীন বৃদ্ধি। অক্টোবর মাসে জিএসটি রিফান্ড বেড়েছে ৩৯.৬%, যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ₹২৬,৯৩৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকরা সরকারের কাছ থেকে দ্রুত রিফান্ড পাচ্ছেন, যা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক ইঙ্গিত।
রিফান্ড বাদ দিলে সরকারের নিট আয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ₹১.৬৯ লক্ষ কোটি টাকা, যা বিগত কয়েক মাসের তুলনায় অনেক বেশি।
🔹 উৎসবের প্রভাব: বাজারে উচ্ছ্বাস, সরকারের মুখে হাসি
দীপাবলির মাসে দেশজুড়ে কেনাকাটার উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। কাপড়, গয়না, মোবাইল, গাড়ি, গৃহস্থালী সামগ্রী—সব ক্ষেত্রেই বিক্রি বেড়েছে। এই সময় অনেক কোম্পানি ডিসকাউন্ট ও অফার দিয়েছিল। সেই সঙ্গে কর হার কমে যাওয়ায় ক্রেতার সংখ্যা আরও বেড়ে যায়।
অর্থনীতিবিদদের মতে, “উৎসবের সময় GST বাড়া মানে মানুষের খরচের ক্ষমতা বাড়ছে। এটি অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের একটি স্পষ্ট চিহ্ন।”
🔹 সরকারের লক্ষ্য পূরণে জিএসটি বড় ভূমিকা
সরকারি অর্থনীতি বিশেষজ্ঞদের ধারণা, চলতি অর্থবর্ষে কেন্দ্রের কর রাজস্ব লক্ষ্য পূরণে জিএসটি বড় ভূমিকা রাখবে। কারণ চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত গড় মাসিক জিএসটি কালেকশন ₹১.৯ লক্ষ কোটির কাছাকাছি রয়েছে, যা ইতিহাসে অন্যতম উচ্চস্তর।
অর্থমন্ত্রীও জানিয়েছেন, কর হ্রাস ও স্বচ্ছ প্রশাসনিক নীতির কারণে GST সংগ্রহ আরও বাড়বে। ব্যবসায়ীরা এখন আগের তুলনায় অনেক সহজে ট্যাক্স জমা দিচ্ছেন।
🔹 তবে গ্রোথ রেটে কিছুটা ধীরগতি
যদিও জিএসটি সংগ্রহ বেড়েছে, কিন্তু গ্রোথ রেট কিছুটা কমেছে। গত কয়েক মাসে যেখানে ৯% পর্যন্ত বৃদ্ধি দেখা গিয়েছিল, সেখানে অক্টোবরে বৃদ্ধি হয়েছে ৪.৬%।
অর্থনীতিবিদদের মতে, এটি স্বাভাবিক কারণ উৎসব-পরবর্তী মাসগুলোতে খরচ কমে যায়। নভেম্বর-ডিসেম্বরের তথ্যেই বোঝা যাবে বাজারের প্রকৃত দিক।
🔹 অর্থনীতির ভবিষ্যৎ ইঙ্গিত
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, উৎসবের সময় জিএসটি বৃদ্ধির এই ধারা যদি ডিসেম্বর পর্যন্ত টিকে থাকে, তাহলে অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে। কর্মসংস্থান ও উৎপাদন উভয় ক্ষেত্রেই ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
সামগ্রিকভাবে দেখা যাচ্ছে—দাম কমলে শুধু ক্রেতাই নয়, সরকারও লাভবান হয়। কম ট্যাক্স, বেশি বিক্রি, বেশি রাজস্ব—এই নীতিই এখন ভারতের অর্থনীতির নতুন মন্ত্র।
অক্টোবর ২০২৫-এ দেশের জিএসটি সংগ্রহ নতুন রেকর্ড গড়ল। দীপাবলি মরসুম, কর কমানো এবং বাজারে চাহিদা বৃদ্ধির জেরে সরকারের কোষাগার উপচে পড়েছে। যদিও গ্রোথ কিছুটা ধীর, তবুও এই পরিমাণ কর সংগ্রহ ভারতের অর্থনীতির শক্তি ও স্থিতিশীলতার প্রতীক।
অর্থাৎ, উৎসবের খরচই এবার দেশের অর্থনীতিতে নতুন আলো জ্বেলেছে।




