
ভারতের পেনশনপ্রাপকদের জন্য নভেম্বর মাস বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রতিবছর এই সময়েই জমা দিতে হয় লাইফ সার্টিফিকেট বা জীবন প্রমাণ। এর মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয় যে পেনশনভোগী এখনও জীবিত এবং সঠিক ব্যক্তির হাতেই পেনশন পৌঁছচ্ছে। আগে এই সার্টিফিকেট জমা দিতে ব্যাংক বা পোস্ট অফিসে যেতে হত, যা বয়স্কদের জন্য বড় সমস্যার কারণ ছিল।
এখন থেকে আর সেই ঝামেলা নেই। কারণ কেন্দ্রীয় পেনশন ও পেনশনভোগী কল্যাণ দপ্তর (DoPPW) চালু করেছে Jeevan Pramaan Face App, যার মাধ্যমে আপনি বাড়ি বসেই মোবাইল থেকে অনলাইনে জমা করতে পারবেন লাইফ সার্টিফিকেট।
নীচে সম্পূর্ণ তথ্য, ধাপে ধাপে প্রক্রিয়া এবং প্রয়োজনীয় নথি দেওয়া হল।
জীবন প্রমাণ অনলাইনে জমা দেওয়ার সুবিধা
লাইফ সার্টিফিকেট জমা দেওয়ার জন্য আর ব্যাংকে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
• বাড়িতে বসেই স্মার্টফোন দিয়ে জমা করা যায়
• সহজ ফেস অথেন্টিকেশন
• OTP ভেরিফিকেশন
• সঙ্গে সঙ্গে ডিজিটাল লাইফ সার্টিফিকেট ডাউনলোড
কীভাবে কাজ করে Jeevan Pramaan Face App?
এই অ্যাপ আধার-ভিত্তিক মুখ শনাক্তকরণ প্রযুক্তি ব্যবহার করে। পেনশনভোগীর মুখ আধারের সঙ্গে ম্যাচ করলে সার্টিফিকেট জেনারেট হয়। ফলে আঙুলের বায়োমেট্রিক বা স্ক্যানার ব্যবহারের প্রয়োজন নেই।
অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের জন্য ধাপে ধাপে প্রক্রিয়া
১. প্রয়োজনীয় দুটি অ্যাপ ডাউনলোড করুন
গুগল প্লে স্টোর থেকে—
- AadhaarFaceRd
- Jeevan Pramaan Face
দুটি অ্যাপ ইনস্টল না করলে ফেস অথেন্টিকেশন কাজ করবে না।
২. অ্যাপ খুলে তথ্য দিন
Jeevan Pramaan Face অ্যাপ খুলে লিখুন—
• আধার নম্বর
• মোবাইল নম্বর
• ইমেল আইডি
৩. ফেস অথেন্টিকেশন করুন
স্ক্রিনে নির্দেশ অনুযায়ী ফ্রন্ট ক্যামেরা অন করে মুখ স্ক্যান করুন।
মুখ সঠিকভাবে ক্যামেরায় ধরার চেষ্টা করুন।
৪. পেনশন সম্পর্কিত তথ্য লিখুন
এখন দিন—
• পেনশনভোগীর নাম
• কর্মস্থল/বিভাগ
• অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ
• PPO নম্বর
• পেনশন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য
৫. OTP ভেরিফিকেশন
আধারের সঙ্গে যুক্ত মোবাইলে একটি OTP আসবে।
OTP প্রবেশ করালেই অটোমেটিক লাইফ সার্টিফিকেট জেনারেট হবে।
৬. লাইফ সার্টিফিকেট জমা সম্পন্ন
স্ক্রিনে দেখাবে— “Life Certificate Successfully Submitted”
সেখান থেকে আপনি চাইলে সঙ্গে সঙ্গে সার্টিফিকেট ডাউনলোড করতে পারেন।
iOS (iPhone) ব্যবহারকারীদের জন্য প্রক্রিয়া
অ্যাপ স্টোর থেকে ডাউনলোড করুন:
- AadhaarFaceRd
- Jeevan Pramaan Face
বাকি সব ধাপ অ্যান্ড্রয়েডের মতোই একই।
আপনার কাছে যা যা থাকতে হবে
অনলাইনে Life Certificate জমা দিতে নীচের জিনিসগুলি অবশ্যই কাছে রাখবেন—
১. আধার কার্ড
অ্যাপ মুখ সনাক্তকরণে আধার ব্যবহার করে।
২. রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বর
OTP পাওয়ার জন্য এটি বাধ্যতামূলক।
৩. ব্যাংক/বিভাগে আধার নম্বর লিঙ্ক করা থাকতে হবে
আধার ও পেনশন রেকর্ড যুক্ত না থাকলে সার্টিফিকেট জমা হবে না।
৪. PPO নম্বর
পেনশন সম্পর্কিত এই ইউনিক নম্বর অবশ্যই মনে রাখতে হবে।
৫. পেনশন অ্যাকাউন্ট নম্বর
যে অ্যাকাউন্টে পেনশন আসে তার তথ্য অ্যাপে দিতে হবে।
লাইফ সার্টিফিকেট জমা দেওয়ার সময়সীমা
সাধারণত ১ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে জমা দিতে হয়।
যারা দেরি করবেন, তাঁদের পেনশন অস্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
টেবিল: অনলাইনে লাইফ সার্টিফিকেট জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া
| ধাপ | করণীয় | ফলাফল |
|---|---|---|
| ১ | দুটি অ্যাপ ইনস্টল | ফেস অথেন্টিকেশন সক্রিয় |
| ২ | আধার, মোবাইল, ইমেল তথ্য দেওয়া | প্রোফাইল যাচাই |
| ৩ | মুখ স্ক্যান করা | আধারের সঙ্গে মিল যাচাই |
| ৪ | পেনশন তথ্য দেওয়া | যাচাইয়ের জন্য প্রস্তুত |
| ৫ | OTP দিয়ে সাবমিট | সার্টিফিকেট জেনারেশন |
| ৬ | ডাউনলোড অপশন পাওয়া | প্রমাণপত্র নিজের কাছে রাখা |
কেন ফেস অ্যাপ আরও সুবিধাজনক?
• আঙুলের বায়োমেট্রিক স্ক্যানার দরকার নেই
• বয়স্কদের জন্য সহজ
• বাড়িতে বসে দ্রুত সম্পন্ন হয়
• লাইনে দাঁড়ানোর ঝামেলা নেই
• পেনশন বন্ধ হওয়ার ভয় কম।
আধিকারিক ওয়েবসাইট
অ্যাপ ছাড়াও প্রয়োজন হলে আপনি ভিজিট করতে পারেন—
jeevanpramaan.gov.in
উপসংহার
বয়স্ক পেনশনভোগীদের জন্য Jeevan Pramaan Face App এক বড় সহায়। ব্যাংকে না গিয়েই এখন স্মার্টফোনে কয়েক মিনিটে জমা করা যায় লাইফ সার্টিফিকেট। আধারের মুখ শনাক্তকরণের মাধ্যমে পুরো প্রক্রিয়া আরও সহজ ও দ্রুত হয়ে উঠেছে।
এখন থেকে নভেম্বর এলেই আর দুশ্চিন্তা নয়—বাড়িতেই করুন আপনার জীবন প্রমাণ জমা।




