ভারতে বেসরকারি শিল্পক্ষেত্রের পরিস্থিতি নিয়ে নতুন তথ্য সামনে এসেছে। কেন্দ্র সরকারের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত পাঁচ আর্থিক বছরে দেশে ২ লক্ষেরও বেশি বেসরকারি কোম্পানি তাদের কার্যক্রম বন্ধ করেছে। এই তথ্য ঘিরে দেশের অর্থনীতি, কর্মসংস্থান এবং শিল্পক্ষেত্রের স্থিতি নিয়ে নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে।
মোদী সরকারের জবাব: পাঁচ বছরে বন্ধ ২,০৪,২৬৮টি কোম্পানি
লোকসভায় লিখিত জবাবে কর্পোরেট বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হর্ষ মালহোত্রা জানান—
- গত পাঁচ বছরে ২,০৪,২৬৮টি বেসরকারি কোম্পানি বন্ধ হয়েছে।
- ২০১৩ সালের কোম্পানি আইনে উল্লেখিত একত্রিকরণ, রূপান্তর, বিলুপ্তি ইত্যাদি কারণে এই প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যক্রম বন্ধ করেছে।
মন্ত্রী আরও জানান, ২০২১–২২ সাল থেকে শুরু করে পাঁচ আর্থিক বছরে ১,৮৫,৩৫০টি কোম্পানিকে সরকারি রেকর্ড থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, কারণ তারা দীর্ঘদিন ধরে কোনও ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করেনি।
কোন বছরে কত কোম্পানি বন্ধ হয়েছে?
সরকার যে পরিসংখ্যান দিয়েছে তাতে বছরের ভিত্তিতে কোম্পানি বন্ধের সংখ্যা নীচের মতো—
টেবিল: আর্থিক বছরে বেসরকারি কোম্পানি বন্ধের সংখ্যা
| আর্থিক বছর | কোম্পানি বন্ধ (সংখ্যা) |
|---|---|
| ২০২০–২১ | ১৫,২১৬ |
| ২০২১–২২ | ৬৪,০৫৪ |
| ২০২২–২৩ | ৮৩,৪৫২ |
| ২০২৩–২৪ | ২১,১৮১ |
| ২০০৪–০৫ (তুলনামূলক পুরনো তথ্য) | ২০,৩৬৫ |
এই পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট, ২০২১–২২ ও ২০২২–২৩ সালে কোম্পানি বন্ধের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর পেছনে মহামারী-পরবর্তী আর্থিক চাপ, বাজার সংকোচন এবং ডিজিটাল প্রতিযোগিতা বড় কারণ।
কোম্পানি রেকর্ড থেকে নাম বাদ: কারণ কী?
সরকার জানিয়েছে—
- ২০১৩ সালের কোম্পানি আইন অনুযায়ী, দীর্ঘদিন ব্যবসায়িক কার্যক্রম না থাকলে প্রতিষ্ঠানকে সরকারি রেকর্ড থেকে বাদ দেওয়া যায়।
- এই প্রক্রিয়ায় গত পাঁচ বছরে ১,৮৫,৩৫০ কোম্পানির নাম মুছে ফেলা হয়েছে।
- এর মধ্যে ৮,৬৪৮টি প্রতিষ্ঠানকে ২০২৪–২৫ অর্থবছরের ১৬ জুলাই পর্যন্ত নিষিদ্ধও করা হয়েছে।
কোম্পানি রেকর্ড থেকে নাম বাদ পড়া মানে প্রতিষ্ঠান আইনি ভাবে নিষ্ক্রিয় বলে ঘোষণা—যা সাধারণত হয় পুঁজি সংকট, ব্যবসা বন্ধ অথবা ট্যাক্স ও রিপোর্টিং নিয়ম না মানার কারণে।
শেল কোম্পানি নিয়ে সরকারের অবস্থান
শেল কোম্পানি বা ভুয়ো সংস্থা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় মন্ত্রী জানান,
২০১৩ সালের কোম্পানি আইনে ‘শেল কোম্পানি’ শব্দটির কোনও সংজ্ঞা নেই।
অর্থাৎ, সরকার আলাদা কোনও আইনগত শ্রেণিবিন্যাস দেয়নি। ফলে অর্থপাচার বা অবৈধ লেনদেনে ব্যবহারের সন্দেহ থাকলেও শুধুমাত্র ‘শেল কোম্পানি’ পরিচয়ে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া যায় না।
কর্মসংস্থান কি কমছে? বিরোধীদের অভিযোগে নতুন মাত্রা
বিরোধী দল বহুদিন ধরেই দাবি করছে—
- দেশে কর্মসংস্থান বাড়ছে না
- ছোট–মাঝারি বেসরকারি শিল্প ভেঙে পড়ছে
- বেকারত্ব বাড়ছে
এই প্রেক্ষাপটে ২ লক্ষেরও বেশি কোম্পানি বন্ধ হওয়ার সরকারি তথ্য বিরোধীদের দাবি আরও জোরালো করেছে।
যদিও কেন্দ্র জানিয়েছে,
কোম্পানি বন্ধ হওয়ার মানেই কর্মসংস্থান হ্রাস নয়, কারণ—
- অনেক প্রতিষ্ঠান একত্রীকরণের ফলে বন্ধ হয়েছে
- কিছু কোম্পানি রূপান্তর অথবা নতুন নামে পুনরায় রেজিস্টার করেছে
- কিছু প্রতিষ্ঠান কাগজে ছিল, বাস্তবে বহুদিন ব্যবসা করছিল না
তবে কর্মসংস্থান হারানো কর্মীদের পুনর্বাসন হয়েছে কি না—এই প্রশ্নের উত্তরে সরকার স্পষ্ট জানিয়েছে,
এ সংক্রান্ত সরকারের কাছে কোনও প্রস্তাব নেই।
বিশেষজ্ঞদের মতে কেন এত কোম্পানি বন্ধ হচ্ছে?
বাজার বিশ্লেষকরা কয়েকটি প্রধান কারণ উল্লেখ করেছেন—
- মহামারীর অর্থনৈতিক ধস
ক্ষুদ্র–মাঝারি শিল্প সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে। - ডিজিটাল প্রতিযোগিতা ও ব্যবসা মডেলের পরিবর্তন
পুরনো ব্যবসা কনসেপ্ট টিকতে পারেনি। - কমপ্লায়েন্স বাড়া
কর, অডিট, বা কার্যক্রম সম্পর্কিত নিয়ম পালনে ব্যর্থ হওয়ায় বহু প্রতিষ্ঠান রেকর্ড থেকে বাদ পড়েছে। - পুঁজি সংকট
নতুন বিনিয়োগ কমে গেছে, ফলে ব্যবসা চালানো কঠিন হয়ে পড়েছিল।
ভবিষ্যতে এর প্রভাব কী হতে পারে?
- বাজারে ছোট–মাঝারি উদ্যোক্তার সংখ্যা কমলে একচেটিয়া কর্পোরেট আধিপত্য বাড়বে।
- কর্মসংস্থান সৃষ্টির গতি কমতে পারে।
- তবে নিষ্ক্রিয় বা ভুয়ো কোম্পানি বাদ পড়ায় ব্যবসার পরিবেশ স্বচ্ছ ও শক্তিশালী হতে পারে।
- সরকার নতুন নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে MSME-খাতকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারে।
Gachurity।Gratuity Calculator। গ্র্যাচুইটি কি?গ্র্যাচুইটি হিসাব করার নিয়ম।
কেন্দ্রের দেওয়া তথ্য স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে যে গত পাঁচ বছরে ভারতের বেসরকারি শিল্পক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন ঘটেছে। দুই লক্ষেরও বেশি কোম্পানির বন্ধ হওয়া যেমন উদ্বেগজনক, তেমনই বহু নিষ্ক্রিয় ও প্রয়োজনে-বিহীন প্রতিষ্ঠান রেকর্ড থেকে বাদ পড়ায় প্রশাসনিক স্বচ্ছতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন নজর থাকবে—এই পরিস্থিতিতে সরকার কর্মসংস্থান বাড়াতে কী পদক্ষেপ নেয় এবং শিল্পক্ষেত্র কীভাবে নিজেদের পুনর্গঠন করে।




