জীবন অনিশ্চিত। কখন কোন বিপদ আসবে, কেউ জানে না। আজ চাকরি আছে, কাল চলে যেতে পারে। আজ শরীর ভালো, কাল হঠাৎ হাসপাতালের খরচে বিপদে পড়তে পারেন। এই ধরনের পরিস্থিতিতে একমাত্র রক্ষাকবচ হতে পারে এমার্জেন্সি ফান্ড। বিশেষজ্ঞরা বলছেন—এই ফান্ড না থাকলে আর্থিক সমস্যায় পড়ে অন্যের কাছে ধার চাইতে হয়, যা পরে মানসিক চাপও বাড়ায়।
🔹 এমার্জেন্সি ফান্ড কী এবং কেন এটি প্রয়োজন?
এমার্জেন্সি ফান্ড এমন একটি অর্থভান্ডার যা হঠাৎ জরুরি পরিস্থিতিতে আপনার পাশে দাঁড়ায়। চাকরি হারানো, পরিবারের অসুস্থতা, দুর্ঘটনা বা বাড়ির যেকোনও অপ্রত্যাশিত খরচ—সবক্ষেত্রেই এটি তাৎক্ষণিক সহায়তা দেয়।
অর্থনীতিবিদ মানসকুমার ঠাকুর বলেন, “যতদিন উপার্জন ঠিক থাকে, ততদিন বিপদের গুরুত্ব বোঝা যায় না। কিন্তু একবার সমস্যায় পড়লে এমার্জেন্সি ফান্ডই প্রকৃত সহায়।”
🔹 অনেকেই ভুল করেন, কেন?
ভাল বেতন পেলেও বেশিরভাগ মানুষ নিয়মিত সঞ্চয় করেন না। মাসের শেষে হাতে কিছুই থাকে না। হঠাৎ বিপদে পড়লে বাধ্য হয়ে ধার করতে হয়। এটি একদিকে সুদের বোঝা তৈরি করে, অন্যদিকে আর্থিক স্বাধীনতা কমিয়ে দেয়।
বিশেষজ্ঞরা তাই বলছেন—“এই ভুল আর নয়। যত দ্রুত সম্ভব, আজ থেকেই এমার্জেন্সি ফান্ড তৈরি শুরু করুন।”
🔹 কত টাকা রাখবেন এই ফান্ডে?
মানসবাবুর মতে, সঞ্চয়ের পরিমাণ বয়স ও খরচের উপর নির্ভর করে।
- যুব বয়সে (২০–৩০ বছর): বেতনের অন্তত ১৫% বা তার বেশি ফান্ডে রাখা উচিত।
- বয়স বাড়লে ও দায়িত্ব এলে (৩০–৫০ বছর): ৮–১০% সঞ্চয় করলেই যথেষ্ট।
এছাড়া মাসিক খরচের হিসাবে অন্তত ৩ থেকে ৬ মাসের ব্যয়ের সমান টাকা এমার্জেন্সি ফান্ডে থাকা প্রয়োজন। অর্থাৎ মাসে ₹২৫,০০০ খরচ হলে অন্তত ₹৭৫,০০০ থেকে ₹১,৫০,০০০ জমিয়ে রাখাই সঠিক।
🔹 কোথায় রাখবেন এই ফান্ড?
এমার্জেন্সি ফান্ড এমন জায়গায় রাখা দরকার, যেখানে সহজে টাকা তোলা যায়, আবার কিছুটা সুদও মেলে। নিচে দেওয়া হল কিছু বিকল্প—
| বিনিয়োগের ধরন | সুবিধা | সীমাবদ্ধতা |
|---|---|---|
| সেভিংস অ্যাকাউন্ট | সহজে টাকা তোলা যায় | সুদ কম |
| রেকারিং ডিপোজিট (RD) | নির্দিষ্ট সুদ, ভাঙা যায় | মাঝপথে ভাঙলে ক্ষতি |
| লিকুইড মিউচুয়াল ফান্ড / SIP | বেশি রিটার্ন, নিয়মিত বৃদ্ধি | তুলতে ২–৩ দিন সময় লাগে |
মানসবাবুর মতে, “যাঁদের নিয়মিত আয় আছে, তাঁরা ফান্ডের একটা অংশ মিউচুয়াল ফান্ডে রাখতে পারেন। এতে লাভও হবে, আবার বিপদে প্রয়োজনে ২–৩ দিনের মধ্যে তুলতে পারবেন।”
🔹 কীভাবে তৈরি করবেন এমার্জেন্সি ফান্ড?
১️⃣ লক্ষ্য ঠিক করুন: প্রথমে ঠিক করুন কত টাকার ফান্ড প্রয়োজন। সেই লক্ষ্য অনুযায়ী পরিকল্পনা করুন।
২️⃣ অটোমেট সেভিংস করুন: প্রতি মাসে বেতনের নির্দিষ্ট অংশ স্বয়ংক্রিয়ভাবে এমার্জেন্সি ফান্ড অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করুন।
৩️⃣ আলাদা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলুন: এই টাকাটি ব্যক্তিগত খরচের সঙ্গে মিশিয়ে ফেলবেন না। একটি নতুন সেভিংস অ্যাকাউন্টে রাখুন এবং শুধু প্রয়োজনে ব্যবহার করুন।
৪️⃣ নিয়মিত রিভিউ করুন: আপনার খরচ ও দায়িত্ব প্রতি বছর বৃদ্ধি পায়। তাই ফান্ডও প্রতি বছর অন্তত ১০% হারে বাড়াতে হবে।
৫️⃣ ফান্ড পুনর্গঠন করুন: একবার ব্যবহার করলে যত দ্রুত সম্ভব সেই টাকাটি পুনরায় জমিয়ে ফেলুন।
🔹 কখন ব্যবহার করবেন?
এই ফান্ড শুধুমাত্র জরুরি পরিস্থিতিতেই ব্যবহার করুন—যেমন মেডিক্যাল খরচ, চাকরি হারানো, বা জরুরি গৃহ মেরামত। কোনও বিলাসবহুল কেনাকাটা বা ছুটির পরিকল্পনার জন্য এই ফান্ড ব্যবহার করা উচিত নয়।
🔹 বিশেষজ্ঞের টিপস:
- এমার্জেন্সি ফান্ড গড়ার জন্য কখনও বড় অঙ্কের অপেক্ষা করবেন না; ছোট থেকেই শুরু করুন।
- এই টাকা কোনও রকম উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগে রাখবেন না।
- নিয়মিত খরচ কমানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন, তাহলেই ফান্ড তৈরি সহজ হবে।
- একাধিক উপার্জন উৎস থাকলে প্রতিটি থেকে সামান্য অংশ এই ফান্ডে দিন।
🔹 উদাহরণস্বরূপ হিসেব:
ধরা যাক, আপনার মাসিক বেতন ₹৩০,০০০ এবং খরচ ₹২২,০০০। তাহলে বাকি ₹৮,০০০-এর মধ্যে অন্তত ₹৩,০০০ এমার্জেন্সি ফান্ডে রাখুন। ১২ মাসে জমবে ₹৩৬,০০০, যা ছোটখাটো চিকিৎসা বা হঠাৎ মেরামতের জন্য যথেষ্ট হতে পারে।
এমার্জেন্সি ফান্ড কেবল টাকা নয়, এটি মানসিক শান্তির এক নিরাপদ ঢাল। বিপদে অন্যের উপর নির্ভর না করে নিজের শক্তিতে দাঁড়ানোর সাহস দেয় এটি।
তাই এখনই শুরু করুন—আপনার বেতনের একটি নির্দিষ্ট অংশ এমার্জেন্সি ফান্ডে রাখুন। কারণ, বিপদ কখনও জানিয়ে আসে না, কিন্তু প্রস্তুতি আপনাকেই নিতে হবে।


