ভারতে ধনী ও গরীবের সংজ্ঞা নিয়ে নতুন করে আলোচনার ঝড় তুলেছেন আর্থিক বিশেষজ্ঞ হিমাংশু পাণ্ড্য (CFA)। তাঁর মতে, বছরে ৫০ লক্ষ টাকা বেতন পেলেও অনেকেই প্রকৃত অর্থে ধনী নন। কারণ, এই আয় সম্পূর্ণ নির্ভর করে চাকরির উপর, যেখানে অর্থ আপনার জন্য কাজ করছে না, বরং আপনি অর্থের জন্য কাজ করছেন।
আপেক্ষিক ‘ধনী’ ও ‘গরীব’ ধারণা
ভারতে অর্থনৈতিক অবস্থান নির্ধারণে সমাজ সাধারণত আয়ের পরিমাণকেই মাপকাঠি হিসেবে ধরে। কিন্তু হিমাংশুর মতে, “উচ্চবেতনভোগী” মানেই ধনী নয়। বরং যারা কেবল বেতন ও বোনাসের উপর নির্ভরশীল, তারা মূলত আর্থিকভাবে সীমিত অবস্থানে থাকেন। প্রকৃত সম্পদ তখনই তৈরি হয় যখন আপনার টাকা আপনাকেই আয় এনে দেয়।
বিনিয়োগই প্রকৃত সম্পদ সৃষ্টির চাবিকাঠি
হিমাংশু পাণ্ড্যের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, কেবল সঞ্চয় করে ধনী হওয়া যায় না। বরং সঠিক বিনিয়োগই দীর্ঘমেয়াদে আর্থিক স্বাধীনতার পথ খুলে দেয়। অর্থাৎ, অর্থের জন্য কাজ না করে, অর্থকে নিজের জন্য কাজ করানোই আসল ধনী হওয়ার সূত্র।
স্মার্ট বেতন পরিকল্পনা
তিনি প্রথমেই বলেন, “বেশি আয় নয়, বরং বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে অর্থ পরিচালনাই ধনী হওয়ার মূলমন্ত্র।”
- বেতনের সমস্ত অংশে কর না দিয়ে কিছু অংশ HRA, LTA বা করমুক্ত ভাতা হিসেবে গ্রহণ করুন।
- ৮০সি ও ৮০ডি ধারার অধীনে বিনিয়োগ করে করছাড়ের সুবিধা নিন।
এইভাবে আয় পরিকল্পিতভাবে ভাগ করলে হাতে বেশি অর্থ থাকে এবং বিনিয়োগের সুযোগ বাড়ে।
উপার্জনকারী থেকে উদ্যোক্তা হওয়ার পথে
হিমাংশুর মতে, “যদি আপনার আয় পরামর্শ, রয়্যালটি বা বিনিয়োগ থেকে আসে, তবে নিজের নামে একটি কোম্পানি বা LLP খুলে তা পরিচালনা করুন।”
এর ফলে ব্যবসায়িক খরচ করের আওতার বাইরে রাখা যায়, যা নিট আয় বাড়িয়ে তোলে। অনেকেই আয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিলাসী জীবনযাপনে ঝুঁকে পড়েন, যা তাদের ভবিষ্যতের আর্থিক নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে।
সঞ্চয় নয়, বিনিয়োগে মনোযোগ দিন
সঞ্চয় অর্থকে স্থবির রাখে, কিন্তু বিনিয়োগ অর্থকে বৃদ্ধি করে। তিনি পরামর্শ দেন—
- অন্তত মাসিক আয়ের ১০ শতাংশ বিনিয়োগে রাখুন।
- মিউচুয়াল ফান্ড, ইনডেক্স ফান্ড, হাউজিং লোন বা করসুবিধাযুক্ত স্কিম বেছে নিন।
- বিনিয়োগকে স্বয়ংক্রিয় করুন (SIP-এর মাধ্যমে)।
টেবিল: হিমাংশু পাণ্ড্যের “ধনী হওয়ার ফর্মুলা”
| ধাপ | করণীয় | লাভ |
|---|---|---|
| ১ | বেতনের স্মার্ট পরিকল্পনা (HRA, LTA, করছাড় স্কিম) | হাতে বেশি নিট অর্থ |
| ২ | আয়কে ব্যবসায়িক কাঠামোতে রূপান্তর | করের বোঝা কমানো |
| ৩ | নিয়মিত বিনিয়োগ | দীর্ঘমেয়াদি সম্পদ সৃষ্টি |
প্রকৃত ধনী কারা?
তিনি বলেন, “যদি আপনি আজ কাজ বন্ধ করে দেন এবং আপনার আয়ও থেমে যায়, তবে আপনি প্রকৃত অর্থে ধনী নন।”
প্রকৃত ধনী সেই ব্যক্তি, যিনি কাজ না করলেও বিনিয়োগ, রয়্যালটি বা ব্যবসায়িক আয় থেকে অর্থ উপার্জন করতে পারেন।
আর্থিক স্বাধীনতার গুরুত্ব
অর্থনৈতিক স্বাধীনতা মানে শুধু বিলাসিতা নয়, বরং মানসিক শান্তি। পর্যাপ্ত বিনিয়োগ থাকলে চাকরি হারানো বা অপ্রত্যাশিত বিপদের সময়েও জীবনের ভারসাম্য নষ্ট হয় না।
“৫০ লক্ষ আয় খারাপ নয়,” বলেন হিমাংশু, “কিন্তু যদি সেই আয় সঠিকভাবে পরিচালিত না হয়, তাহলে আপনি কেবল একজন উচ্চবেতনভোগী, প্রকৃত ধনী নন।”
শেষ কথা
আয় যতই হোক না কেন, যদি সেই অর্থ আপনার জন্য কাজ না করে, তবে আর্থিক নিরাপত্তা কল্পনাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে। তাই আজই শুরু করুন বুদ্ধিদীপ্ত বিনিয়োগ ও পরিকল্পনা, যাতে আগামী দিনে আপনি অর্থের জন্য নয়, অর্থ আপনার জন্য কাজ করে।




