কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের জন্য বড় সুখবর। বহু প্রতীক্ষিত অষ্টম বেতন কমিশন (8th Pay Commission) গঠনের ঘোষণা দিয়েছে মোদী সরকার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছেন, কমিশনকে আগামী ১৮ মাসের মধ্যে তাদের সুপারিশ জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে সরকারকে একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন (interim report) জমা দেওয়ার সুযোগও থাকবে।
১৮ মাসের মধ্যে জমা দিতে হবে রিপোর্ট:
সরকারি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, অষ্টম বেতন কমিশন তাদের রিপোর্ট প্রস্তুত করার সময় দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, রাজস্ব অবস্থা ও আর্থিক শৃঙ্খলা বিবেচনা করবে। কমিশনকে আগামী দেড় বছরের মধ্যে চূড়ান্ত সুপারিশ জমা দিতে হবে, যাতে তা সময়মতো বাস্তবায়ন করা যায়।
বিশেষজ্ঞদের অনুমান, অষ্টম বেতন কমিশনের সুপারিশ ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে, ঠিক যেমন সপ্তম বেতন কমিশন কার্যকর হয়েছিল ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে।
রাজ্যগুলির আর্থিক অবস্থাও মূল্যায়ন করা হবে:
কমিশনের দায়িত্ব কেবল কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের বেতন নির্ধারণে সীমাবদ্ধ নয়। সুপারিশ তৈরির সময় রাজ্যগুলির আর্থিক অবস্থাও বিশ্লেষণ করা হবে, কারণ অধিকাংশ রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় কমিশনের বেতন কাঠামোর ভিত্তিতেই নিজেদের কর্মচারীদের বেতন নির্ধারণ করে।
অর্থাৎ, অষ্টম বেতন কমিশনের প্রভাব কেবল কেন্দ্রীয় নয়, বরং সমস্ত রাজ্য প্রশাসনেও বড়সড় প্রভাব ফেলবে।
কারা উপকৃত হবেন?
এই কমিশনের ফলে উপকৃত হবেন ৫০ লক্ষেরও বেশি কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং প্রায় ৬৯ লক্ষ পেনশনভোগী। তাদের বেতন, ভাতা, পেনশন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধায় বড় পরিবর্তন আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সর্বাধিক আলোচ্য প্রশ্ন — কতটা বাড়বে বেতন এবং পেনশন? অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, অষ্টম বেতন কমিশনের অধীনে ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর (Fitment Factor) বৃদ্ধি পাবে, যার ফলে বেসিক পে এবং ডিএ (Dearness Allowance) উভয়ই উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে।
ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ও ডিএ কীভাবে প্রভাব ফেলবে?
বেতন বৃদ্ধির মূল ফর্মুলা নির্ভর করে ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর এবং ডিএ-র উপর। সপ্তম বেতন কমিশনে ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ছিল ২.৫৭, যা এবার বেড়ে হতে পারে ২.৮৬ বা তারও বেশি। অর্থাৎ, ১৮,০০০ টাকার বেসিক বেতন বেড়ে হতে পারে প্রায় ₹৫১,৪৮০ টাকা।
বর্তমানে কর্মচারীরা ৫৮ শতাংশ ডিএ পাচ্ছেন। অষ্টম বেতন কমিশন কার্যকর হলে ডিএ পুনরায় শূন্য থেকে শুরু হবে, তবে নতুন হার নির্ধারণের সঙ্গে তা আবার বৃদ্ধি পাবে।
বেতন, ভাতা ও অবসরকালীন সুবিধার পর্যালোচনা:
কমিশনের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হবে বেতন কাঠামো, ভাতা, পেনশন, গ্র্যাচুইটি, চিকিৎসা সুবিধা এবং অন্যান্য আর্থিক সুযোগ-সুবিধার পর্যালোচনা।
এই কমিশন সরকারি কর্মচারীদের জন্য একটি নতুন এইচআরএ (House Rent Allowance) হার সুপারিশ করতে পারে, বিশেষত মেট্রো শহরগুলিতে যেখানে বাড়ি ভাড়া তুলনামূলকভাবে বেশি।
এছাড়াও ট্রাভেল অ্যালাউন্স (TA) বৃদ্ধির সম্ভাবনাও রয়েছে, যাতে কর্মীরা ভ্রমণ ব্যয় বাবদ আরও বেশি সহায়তা পান।
স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সুবিধার উন্নয়ন:
অষ্টম বেতন কমিশন স্বাস্থ্য সুবিধা উন্নত করার দিকেও জোর দেবে। সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট হেলথ স্কিম (CGHS)-এর আওতায় আরও বেশি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার যুক্ত হতে পারে। মেডিকেল রিইম্বার্সমেন্ট প্রক্রিয়া আরও সহজ ও ডিজিটাল করা হতে পারে।
কর্মচারী ও তাঁদের পরিবারের জন্য স্বাস্থ্যবিমা কভার বাড়ানোর প্রস্তাবও কমিশনের সুপারিশের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে বলে সূত্রের দাবি।
গ্র্যাচুইটির সীমা বাড়ানো হতে পারে:
বর্তমানে গ্র্যাচুইটির সর্বোচ্চ সীমা ₹২০ লক্ষ, যা ₹২৫ লক্ষ বা তারও বেশি করা হতে পারে। একইসঙ্গে, NPS (ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেম)-এর আওতায় সরকারি কর্মচারীদের অবদান এবং রিটার্নের হার নিয়েও নতুন প্রস্তাব আসতে পারে।
শিশু শিক্ষা সহায়তা ও অন্যান্য সুবিধা:
অষ্টম বেতন কমিশনে Child Education Allowance (CEA)-এর হার বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও Leave Travel Concession (LTC), ট্রান্সফার ভাতা, ইউনিফর্ম ভাতা প্রভৃতি ক্ষেত্রেও সংশোধন আসতে পারে।
পেনশনভোগীদের জন্য সুখবর:
অষ্টম বেতন কমিশনের অন্যতম লক্ষ্য পেনশন ও অবসরকালীন সুবিধার উন্নতি। পেনশনে ডিআর (Dearness Relief) বৃদ্ধির পাশাপাশি অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের চিকিৎসা সুবিধা এবং ভাতা সরাসরি সংশোধন করা হবে।
এছাড়াও পেনশন পুনঃনির্ধারণের ফর্মুলা সহজ ও স্বচ্ছ করার দিকে জোর দেওয়া হতে পারে, যাতে প্রতিটি পেনশনভোগী সমান হারে সুবিধা পান।
অর্থনৈতিক প্রভাব:
অর্থনীতিবিদদের মতে, অষ্টম বেতন কমিশন বাস্তবায়িত হলে বাজারে ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, যার ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়তে পারে। তবে এর ফলে সরকারের রাজস্ব ব্যয়ও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে, যা বাজেটে চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
অষ্টম বেতন কমিশনের লক্ষ্য শুধুমাত্র বেতন বৃদ্ধি নয়, বরং সরকারি কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের আর্থিক নিরাপত্তা ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন।
ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর বৃদ্ধি, নতুন ডিএ হার, এইচআরএ সংশোধন, চিকিৎসা ও শিক্ষা সহায়তা — সব মিলিয়ে অষ্টম বেতন কমিশন কর্মচারীদের জন্য একটি সমগ্র আর্থিক সংস্কার প্যাকেজ হতে চলেছে।

